
কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি এমন এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা নিয়ে প্রশাসনিক মহলে আলোচনা চলছে। প্রাক্তন সচিব, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সহ মোট ১২ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির সরকারি ফ্ল্যাটের বরাদ্দ বাতিল করেছে সরকার। তারা অনেকদিন ধরেই সরকারি বাসভবনে থাকছিলেন, যদিও তাঁদের চাকরি শেষ হয়ে গেছে বহুদিন। এবার তাঁদের ওই বাসভবন ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তের পিছনে প্রশাসনিক নিয়ম এবং হাউজিং রুলসের গুরুত্ব বোঝাতে চাইছে সরকার। বহু বছর ধরে একাধিক প্রাক্তন উচ্চপদস্থ অফিসার ও বিচারপতিরা সরকারি ফ্ল্যাটে থাকলেও, এখন এই প্রথার পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
কে কে পড়েছেন এই বাতিলের তালিকায়?
This Article Includes
সূত্র অনুযায়ী, যাঁদের ফ্ল্যাট বরাদ্দ বাতিল হয়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন প্রাক্তন সচিব, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ সরকারি আধিকারিক যাঁরা ইতিমধ্যেই অবসরে গেছেন। ফ্ল্যাটগুলি মূলত দিল্লির প্রধান এলাকায় অবস্থিত, যেমন লুটিয়েন জোন বা মোতিলাল নেহরু মার্গের মতো অভিজাত এলাকায়।
কিছু প্রাক্তন বিচারপতি তো অবসর নেওয়ার পরও প্রায় ৭-৮ বছর ধরে ওই বাসভবনে ছিলেন। যদিও সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, অবসরের ২-৩ মাসের মধ্যে সরকারি ফ্ল্যাট খালি করে দেওয়ার কথা।
কেন এই সিদ্ধান্ত?
সরকারের তরফে বলা হয়েছে, অনেক সময় দেখা যাচ্ছে যে যারা এখনো সক্রিয় পরিষেবায় রয়েছেন, তাঁদের জন্য পর্যাপ্ত বাসস্থানের অভাব দেখা দিচ্ছে। কিন্তু অবসারপ্রাপ্ত অনেক ব্যক্তিই বছরের পর বছর ধরে সরকারি বাসভবনে থেকে যাচ্ছেন। এতে করে নতুন পদে নিযুক্ত কর্মচারীদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
সরকার জানিয়েছে, হাউজিং অ্যান্ড আরবান অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রকের নির্দেশ অনুযায়ী যারা দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বা নিয়ম বহির্ভূতভাবে সরকারি বাসভবনে রয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
কী হবে পরবর্তী পদক্ষেপ?
প্রাথমিকভাবে সংশ্লিষ্টদের একটি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তাঁদের বলা হয়েছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাসভবন খালি করে দিতে। যদি তাঁরা সেটি না করেন, তাহলে আইন অনুযায়ী উচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
এর পাশাপাশি, অতিরিক্ত মাস থাকার জন্য অর্থনৈতিক জরিমানা ও বিলম্ব ফি ধার্য করার কথাও ভাবছে সরকার।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
এই সিদ্ধান্তে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে রাজনৈতিক মহলে। অনেকেই বলছেন এটা একটি ভালো পদক্ষেপ, যাতে করে সরকারি সম্পত্তির অপব্যবহার বন্ধ হবে। আবার কেউ কেউ বলছেন, সরকার শুধু কয়েকজনকেই নিশানা করছে, যেখানে আরও অনেক ব্যক্তি রয়েছেন যাঁরা একই কাজ করছেন কিন্তু তাঁদের কিছু বলা হচ্ছে না।
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া
সাধারণ মানুষের অনেকেই বলছেন, যখন একজন সাধারণ কর্মচারী চাকরি ছাড়ার পর সরকারি বাসভবন ছেড়ে দেন, তখন উচ্চপদস্থ কেউ কেন বছরের পর বছর ধরে সেই সুবিধা ভোগ করবেন? এই সিদ্ধান্তকে অনেকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, সরকারি সম্পদ সকলের জন্য সমানভাবে ব্যবহার হওয়া উচিত।
প্রশাসনিক দৃষ্টিভঙ্গি
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সিদ্ধান্ত একটি বার্তা দিচ্ছে—যে কেউ হোন না কেন, নিয়ম সকলের জন্য প্রযোজ্য। সরকারি সম্পত্তি ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করা চলবে না। যারা নিয়ম মানবেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে সরকার কড়া ব্যবস্থা নেবে।
ভবিষ্যতে কী হতে পারে?
এখন দেখা যাচ্ছে সরকার কড়া মনোভাব নিয়েছে এই বিষয়ে। ভবিষ্যতে আরও অনেক অবসারপ্রাপ্ত কর্মচারীদের ফ্ল্যাট বরাদ্দ খতিয়ে দেখা হতে পারে। সরকার চাইছে সক্রিয় পরিষেবায় থাকা অফিসারদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা সময়মতো দেওয়া হোক।